Assisted Bangla Reading - Mouseover

<< Back to Index of Assisted Bangla Reading

আমাদের দুই প্রিয় কবির কথা
About Our Two Favourite Poets
from ichchhamoti.in - A Webzine for Children
 
amader dui priyo kobir kotha

কদিন আগেই চলে গেল ১৫৭তম রবীন্দ্রজয়ন্তীনিশ্চয় নানারকমের অনুষ্ঠান উদযাপনের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছ দিনটাসেকথা নয় অন্য আর একদিন শোনা যাবেআজ বরং কবিগুরুর এক প্রিয় শিষ্যের কথা বলি

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় ১৮৯৯ সালের ২৪শে মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ), এক অত্যন্ত গরিব পরিবারে সেই শিষ্যের জন্ম হয়েছিল বলে বাবা মা নাম রেখেছিল দুখুমিঞাএই দুখুমিঞার বয়স যখন মাত্র চৌদ্দ বছর, তখন রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন

ছেলেটি ভীষনভাবে ভালবাসত কবিগুরুর গানকবিগুরুর লেখায় যে মানবতা, সাম্যবাদ, উদারতা, দেশপ্রেম প্রকাশ পেত তা দুখুমিঞাকে অনুপ্রেরনা দিয়েছিল কালজয়ী কবিতা, গান রচনা করতে

হ্যাঁ, এই দুখুমিঞাই আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামরবিন্দ্রনাথের সাথে প্রথম থেকেই তাঁর সম্পর্কটা ছিল গুরু শিষ্যের মতই

জানো তো, রবীন্দ্রনাথ '১৪০০ সাল' কবিতা লেখেন ১৩০২ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসেকবিতাটি ছিল এইরকম-

'আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতূহলভরে,আজি হতে শতবর্ষ পরে।'

নজরুল, ১৩৩৪ সালের আষাঢ় মাসে কবিগুরুকে শ্রদ্ধা ভক্তি জ্ঞাপন করে লিখেছিলেন-

'আজি হতে শতবর্ষ আগে
কে কবি,স্মরণ তুমি করেছিলে আমাদেরে
শত অনুরাগে,
আজি হতে শতবর্ষ আগে।'

নজরুল সৈনিক হিসাবে চাকুরি করে ২১ বছর বয়সে কলকাতায় ফিরে আসেনতখন ১৯২০ সালতিনি ওঠেন বঙ্গ মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসেসাথে একটা বাক্সে ছিল কবিতার খাতা, গল্পের খাতা, পুঁথি, পুস্তক, পত্রিকা রবীন্দ্রনাথের গানের স্বরলিপি

তুমি জানলে হয়ত অবাক হবে, ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে শান্তিনিকেতনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ হয়তখন নজরুলের বয়স ২২ বছরডঃ মহম্মদ শাহীদুল্লাহ তাঁকে শান্তিনিকেতন নিয়ে জানবোলপুর স্টেশনে কবিগুরুর সচিব, কবি সুধাকান্ত রায়চৌধুরী তাঁদের অভ্যর্থনা করেনকবিগুরুর অনুরোধে নজরুল 'অগ্নিবীণা' থেকে 'আগমনী' পাঠ করেন কিছু রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে শোনানএবং নজরুলের অনুরোধেও গুরুদেব 'মাধবী হঠাৎ কোথা হতে, এল ফাগুন দিনের স্রোতে...' আবৃত্তি করেন

এরপর অবশ্য তাঁদের বেশ কিছুবার সাক্ষাৎ হয়েছিল

এই প্রসঙ্গে আর একটা মজার কথা বলি, জানো তো, ১৯২১ সালের ডিসেম্বরে 'বিদ্রোহী' কবিতা রচনা করেই নজরুল সরাসরি জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এসে উচ্চস্বরে তা আবৃত্তি করতে থাকেনরবীন্দ্রনাথ তাঁকে জড়িয়ে ধরেন

১৯২২ সালকলকাতার রামমোহন লাইব্রেরীতে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত স্মরণে যে শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়,নজরুল সেখানে 'সত্যকবি' কবিতা পাঠ করেনসেসময়, তাঁদের এমন মৌলিক গুরুশিষ্য সম্পর্কে অন্যান্য কবি সাহিত্যিকরা যথেষ্ট ঈর্ষা অনুভব ক্রতেনরবীন্দ্রনাথের 'গোরা' উপন্যাস অবলম্বনে তৈরী ছায়াছবিতে নজরুল সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেনবিশ্ব ভারতী কর্তৃপক্ষ তাতে বাধ সাধলেও স্বয়ং কবিগুরু নজরুলকে স্বীকৃতি দেন

এরপর নজরুলের 'ধূমকেতু' পত্রিকার জন্য গুরুদেব আশীর্বাণী লিখে দেনএই পত্রিকার দ্বাদশ সংখ্যায় 'আনন্দময়ীর আগমন' নামে একটি প্রতীকধর্মী লেখার জন্য নজরুলকে রাজদ্রোহের অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়তাঁর একবছর সশ্রম কারাদন্ড হয়

এইসময় রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'বসন্ত' গীতিনাট্যটি তাঁর প্রিয় শিষ্যকে উৎসর্গ করেনএই প্রথম ঠাকুর পরিবারের বাইরের কাউকে এভাবে কোন গ্রন্থ উৎসর্গ করা হয়এই ঘটনা কারাগারে বন্দী নজরুলের সকল জ্বালা যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছিলনজরুল তাঁর অগ্রজকে উৎসর্গ করেন তাঁর 'সঞ্চিতা' কাব্যগ্রন্থটি

আরও একটি ঘটনা বললে তুমি বুঝতে পারবে কবিগুরু তাঁর দুখুমিঞাকে কতটা স্নেহ করতেন

১৯২৩ সালে নজরুল হুগলী জেলে অনশন শুরু করলে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে অনশন ত্যাগের টেলিগ্রাম দেনতবে প্রেসিডেন্সি জেলের ঠিকানায় টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন বলে জেল কর্তৃপক্ষ সেটিকে ফেরত পাঠায়

রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে শান্তিনিকেতনে থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেনকিন্তু অস্থির প্রকৃতির নজরুল কোন নিয়মের বেড়াজালে থাকতে পারতেন না বলে সেখানে যাননি

১৯৩৪ সালে 'নাগরিক' পত্রিকার জন্য নজরুল, কবিগুরুর কাছে লেখা চেয়ে চিঠি দেনকিন্তু তখন পঁচাত্তর বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথ খুবই অসুস্থ থাকায় তা সম্ভব হয়নি

রবীন্দ্রনাথের ৮০ বছর পূর্তিতে নজরুল 'অশ্রুপুষ্পাঞ্জলি' লেখেনকবিগুরুর মৃত্যুতে নজরুল যে কতটা শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন তার প্রমাণ মেলে তাৎক্ষনিক লেখা কিছু কবিতায়

১৯৪০ সালের ২২শে শ্রাবন, আকাশবাণীর বেতারকেন্দ্র থেকে নজরুল ধারাবর্ণনা প্রচার করেনআবৃত্তি করেন কবিতা 'রবিহারা'। রচনা করেন 'ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবিকে'।এছাড়া 'সালাম অস্তরবি' 'মৃত্যুহীন রবীন্দ্র' কবিতা দুটিও রচনা করেন

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর, তাঁর শিষ্যটিও চিরতরে অসুস্থ, ক্রমে সম্বিতহারা নির্বাক হয়ে যানবাংলার দুই মহান কবির কন্ঠ প্রায় একই সময়ে নীরব যায়

রবীন্দ্রনাথ নজরুলের এই শ্রদ্ধা স্নেহের মৌলিক সম্পর্ক অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেছেদুই কবির রচনাতেই সর্বদা প্রাধান্য পেয়েছে ধর্মের ওপর মানুষ সত্যধবনিত হয়েছে বার বার সাম্যের কথা, মানবতার কথা, দেশপ্রেমের কথা, মৈত্রী, প্রেম, শান্তি, ভ্রাতৃত্বের কথা